September 20, 2024, 6:01 pm
দৈনিক আলো প্রতিদিন ডেস্ক: মঙ্গলবার (৫ মার্চ) ভারতীয় সংবাদমাধ্যম দ্য হিন্দু এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, কলকাতাগামী একটি ফ্লাইটে বিস্ফোরক আছে দাবি করে দিল্লি বিমানবন্দরে প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর অভিযোগে ২৯ বছর বয়সী এক বাংলাদেশি নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে ভারতীয় পুলিশ।
পুলিশ জানিয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত ওই বাংলাদেশির নাম মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম। মূলত দিল্লি থেকে কলকাতাগামী ওই ফ্লাইটটি যেন বাতিল করা হয় সে লক্ষ্যেই দিল্লির বিমানবন্দরে প্রতারণামূলক ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন তিনি।
পুলিশ জানায়, গত রোববার মোহাম্মদ নজরুল ইসলামকে কলকাতা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। আর প্রতারণামূলক ই-মেইল পাঠানোর পর নিরাপত্তা পরীক্ষার কারণে কয়েক ঘণ্টা বিলম্বের পর গত ২৭ ফেব্রুয়ারি ফ্লাইটটি কলকাতা বিমানবন্দরে অবতরণ করে।
পুলিশ বলেছে, শুধুমাত্র নিজের স্ত্রীর কাছ থেকে তার আসল পরিচয় গোপন রাখার জন্য নজরুল ইসলাম এই অপরাধ করেছেন। কারণ তিনি তার স্ত্রীকে বলেছিলেন, তিনি (নজরুল ইসলাম) যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবেষণার স্কলার।
মূলত নজরুল ইসলাম তার আসল পরিচয় প্রকাশ না করেই এক নারীকে বিয়ে করেন। তার স্ত্রীর নাম সোনিয়া এবং নজরুল একেক বার একেক অজুহাতে তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিতে না চাওয়ার পর পরে তার সন্দেহ হয়। আর এরপরই সোনিয়া তার স্বামীর এই কর্মকাণ্ডের পেছনে সত্য উদঘাটনের সিদ্ধান্ত নেন বলে জানায় পুলিশ।
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রঙ্গনানি বলেছেন, ‘গত ২৭ ফেব্রুয়ারি দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেডের নিরাপত্তা অফিসারের কাছ থেকে ইন্দিরা গান্ধী ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়। অভিযোগে বলা হয়, বিমানবন্দরে কেউ বিস্ফোরক বহন করছে এবং প্রতিটি ব্যাগ ও লাগেজ চেক করার হুমকি-সম্বলিত ই-মেইল পাওয়া গেছে।’
মূলত নজরুলের স্ত্রী সোনিয়া তার ভাইকে ফ্লাইটে করে দিল্লি থেকে কলকাতায় পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কলকাতায় এসে নজরুল ইসলামের সঙ্গে ২৭ ফেব্রুয়ারি তার দেখা করার কথা ছিল। কিন্তু শ্যালকের কাছে তিনি ধরা পড়তে পারেন এই ভয়ে কলকাতাগামী যে ফ্লাইটে তার শ্যালক উঠতে চলেছেন সেই ফ্লাইট সম্পর্কে নজরুল দিল্লি বিমানবন্দরে ওই ই-মেইল পাঠান।
ডিসিপি বলেছেন, ‘তথ্যের ভিত্তিতে পুলিশ দিল্লির এই বিমানবন্দরে হাই অ্যালার্ট জারি করে। যদিও এই ই-মেইলটি পরে প্রতারণামূলক বলে প্রমাণিত হয়। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তি এই ভুয়া বার্তা পাঠানোর জন্য নতুন ই-মেইল ঠিকানা তৈরি করে বলেও তদন্তের সময় পুলিশ দেখতে পায়। পরে পুলিশ জানতে পারে, কলকাতার একটি হোটেল থেকে ই-মেইলটি পাঠানো হয়েছিল।’
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার ঊষা রঙ্গনানি বলেন, নজরুলের ফোন পরীক্ষা করা হলেও তিনি এর পুরো হিস্টরি মুছে দিয়েছেন। তিনি পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে নিজের অপরাধ স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, তিনি ফ্লাইটটি বাতিল করার জন্য ই-মেইলটি পাঠিয়েছিলেন। কারণ তার শ্যালক তার সাথে দেখা করতে আসছেন এবং তিনি চান না, তার শ্যালক কলকাতায় পৌঁছান।
অভিযুক্ত নজরুল জানিয়েছেন, তিনি ২০১৭ সালে পাঞ্জাবের লাভলি প্রফেশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে একটি এভিয়েশন কোর্স করেছিলেন। আর সেখানেই তিনি তার স্ত্রীর সাথে প্রথম দেখা করেন।
ঊষা রঙ্গনানি বলেন, ‘কোর্স শেষ করে নজরুল তার দেশে চলে যায়। এরপর ২০২০ সালে তিনি আবারও সোনিয়ার সাথে সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে যোগাযোগ করেন। এসময় তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে পিএইচডি করছেন এবং মার্কিন ভিসা পেয়েছেন বলে সোনিয়াকে বোকা বানান। মূলত ওই নারী নজরুলের ফেক প্রোফাইল দেখে প্রভাবিত হয় এবং ২০২৩ সালের এপ্রিলে তিনি তাকে বিয়ে করেন। তবে বিয়ের পরপরই স্ত্রী নজরুলকে সন্দেহ করা শুরু করেন এবং তাকে যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে যাওয়ার জন্য জোর করতে থাকেন।’